ঈদের সপ্তাহখানেক আগে জমেছে নতুন নোটের ব্যবসা

ঈদের সপ্তাহখানেক আগে জমেছে নতুন নোটের ব্যবসা

জাতীয় ধর্মীয়

প্রতিবেদকঃ মোঃ রাহাত হোসেন

আরমাত্র কয়েক দিন পরেই পালিত হবে  ধর্মপ্রান মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।  এ সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন টাকাও সংগ্রহ করেন অনেকে। ঈদ সালামি দেওয়া ছাড়াও নতুন নোটের মাধ্যমে জাকাত এবং ফিতরাও বিতরণ করেন অনেকে।  ফলে চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নতুন নোট বেচাকেনার অস্থায়ী দোকান।  সময় যত গড়াচ্ছে, নতুন নোটের ব্যবসা তত জমে উঠছে।

ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। এবারও বাংলাদেশ ব্যাংক তাই করছে। বাজারে ৫, ১০, ২০, ৫০,১০০,৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়েছে।  গত ৩১ মার্চ থেকেই নতুন নোট বিতরণ শুরু হয়েছে; আগ্রহী সাধারণ মানুষ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন।

তবে নতুন নোট সংগ্রহের জন্য অনেক সময় ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেকের পক্ষে অফিস সময়ের মধ্যে নতুন নোট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা সুবিধাজনক সময়ে ঝামেলাহীনভাবে নতুন নোট সংগ্রহ করতে চান। মূলত এ শ্রেণির গ্রাহকেরাই অস্থায়ী দোকানগুলোর নতুন নোটের ক্রেতা। তবে এসব দোকান থেকে নোটভেদে প্রতি বান্ডিলে তাদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি  দিতে হচ্ছে।

রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ও গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেট, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের মোড়, ও চক বাজারের সামনে নতুন নোটের বেশির ভাগ বিক্রেতা বসেন।  গত বুধবার মতিঝিল, গুলিস্তান  ও চক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একের পর এক ক্রেতাও আসছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকেরা বেশি পরিমাণে নতুন নোট কিনছেন। ২৭ রমজানের পরে গ্রামের বাড়ি ফেরা ও শ্রমজীবী ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।

বিক্রেতারা জানান, নতুন টাকা সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোয় তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফলে ব্যাংক থেকে সরাসরি নতুন নোট কিনতে পারেন না তাঁরা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে তাঁরা নতুন নোট সংগ্রহ করেন। কয়েক হাত ঘুরে এ নোটগুলো বিক্রেতাদের হাতে আসে। এ কারণে নতুন নোটের দামও বেড়ে যায়।

এভাবে নতুন ২ টাকার বান্ডিলে ১২০ টাকা, ৫ টাকার বান্ডিলে ১২০-১৫০ টাকা, ৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডিলে ১৫০-২০০ টাকা এবং ২০০ টাকার বান্ডিলে ১০০ টাকা করে বাড়তি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসে, নতুন নোটের দাম তত বাড়তে থাকে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে একটু দরাদরি করে নিলে দামে কিছুটা ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে।

বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায়ও নতুন নোটের দাম বান্ডিল প্রতি ৩০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে এই দাম আরও কম ছিল। তখন ২, ৫, ১০ ও ২০ টাকার নোটে ৮০-১০০ টাকা বেশি লাগত। আর ৫০ ও ১০০ টাকার নোটে বাড়তি লাগত ১২০-১৫০ টাকা।

বুধবার  চক বাজারে  নতুন টাকা কিনতে আসেন একজন ব্যবসায়ী কাওসার খান। তিনি জানান, প্রতিবছর দুই ঈদের সময় নতুন নোট সংগ্রহ করেন তিনি। গত বছর ১০০ টাকার নোটের একটা বান্ডিল কিনেছিলেন অতিরিক্ত দেড় শ টাকা দিয়ে; এ বছর সেটির জন্য বাড়তি ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।

রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করেন বরিশালের মো রবিউল ইসলাম । বুধবার তিনি রাজধানীর গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে যান। প্রতিবছরই ঈদের সময়  বাড়ি ফেরার পথে নতুন নোট কেনেন তিনি। জানতে চাইলে  মো রবিউল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রতি বান্ডিলে ৩০-৫০ টাকা বেশি দাম রাখা হচ্ছে।

কোন নোটের চাহিদা কেমন 

বিক্রেতারা জানালেন, একেক বছর একেক ধরনের নোটের চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে নতুন ধরনের কোনো নোট ইস্যু হলে সেটির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর ঈদে ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরপর ৫ ও ২ টাকার নোট বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে সচ্ছল ক্রেতারা বেশি পরিমাণে ৫০ ও ১০০ টাকার নোটও কিনছেন।

বিক্রেতারা জানান, সাধারণত জাকাত-ফিতরা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রেতারা ৫০, ১০০ ও ২০০ টাকার নোট বেশি কেনেন। এসব নোটের বড় অংশ বিক্রি হয় ২৭ রোজার আগেই। অন্যদিকে, ঈদ সালামির জন্য বেশি বিক্রি হয় ২, ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট।

রাজধানীর গুলিস্তানে প্রায় দুই যুগ ধরে নতুন-পুরোনো টাকার ব্যবসা করেন মো. করিম। তিনি জানান, যে বছর নতুন নকশার নোট ইস্যু করা হয়, সেবার নোটের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ঈদের কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি–সংবলিত পাঁচ ধরনের নতুন নোট বাজারে আনা হয়। এ কারণে ওই বছর ঈদের সময় নতুন নোটের চাহিদা এবং দামও অনেক বেড়ে যায়। তখন ১০, ২০ টাকার নোটের বান্ডিলে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দিতে হয়েছিল।

যত ধরনের নোট পাওয়া যায় 

দেশে দুই ধরনের নোট রয়েছে—ব্যাংক নোট ও সরকারি নোট। ব্যাংক নোট ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। আর সরকারি নোট বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে থাকে অর্থসচিবের সই।

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ৫ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট হিসেবে ছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কয়েনেজ আইন সংশোধন করে ৫ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত ১, ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা সরকারি মুদ্রা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। অন্যদিকে, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট হচ্ছে ব্যাংক নোট।

যখন যে নোট বাজারে আসে 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সরকার নতুন মুদ্রা প্রচলনের ঘোষণা দেয়। এই মুদ্রা বাজারে আসতে প্রায় ৩ মাস সময় নেয়। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে প্রথমবারের মতো ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। এসব নোটের মধ্যে বর্তমানে ১ টাকার নোটের তেমন ব্যবহার দেখা যায় না। তবে অন্যান্য নোট প্রচলিত রয়েছে।

১৯৭৬ সালে দুই মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে আনা হয়। এগুলো হচ্ছে—৫০ ও ৫০০ টাকার নোট। এর মধ্যে ওই বছরের ১ মার্চ ৫০ টাকার নোট এবং ১৫ ডিসেম্বর ৫০০ টাকার নোট বাজারে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন বছর পরে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের ২০ আগস্ট তারিখে ২০ টাকার নোট বাজারে আনা হয়। প্রচলিত নোটগুলোর মধ্যে খুচরা পর্যায়ে বহুল ব্যবহৃত ২ টাকার নোট বাজারে আনা হয় ১৯৮৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর।

দেশে বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে বড় মানের মুদ্রা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট। ২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর নোটটি ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ২০০ টাকা মানের নোটটি বাজারে আনা হয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ তারিখে। তবে বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ঈদের সময়, এসব নোট নতুন করে ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হয়।

আরোও পড়ুনঃ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারক চক্রের ০৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ১০