আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৪ বছরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডির টিআইবির নিজ কার্যালয়ে ‘সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার ফল উপস্থাপনের সময় এ সব তথ্য জানায় টিআইবি।
গবেষণায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আওতাভুক্ত করা হয়েছে। গবেষণায় দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো গুরুত্ব দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার নিচের প্রকল্পগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩-৪০ শতাংশ।
এর মধ্যে নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতির হার ১১-১৪ শতাংশ ও নির্মাণ কাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০-২০ শতাংশ; দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২-৬ শতাংশ।
টিআইবির গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন এবং গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজ’র কোনো কোনো কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীদের ২-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন; এ ক্ষেত্রে কখনও কখনও প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫-৩০ শতাংশ অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টিআইবি এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এক দিকে অতি উচ্চ ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, অন্যদিকে নির্মিত সড়ক ও সেতুর মান খারাপ হচ্ছে ও টেকসই হচ্ছে না, যা প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনকে ব্যাহত করছে এবং জাতীয় সম্পদের বিপুল পরিমাণ অপব্যবহার ও অপচয় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সড়ক ও মহাসড়ক খাতে রাজনীতিবিদ, সংশ্লিষ্ট আমলা ও ঠিকাদারের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারণ, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে করায়ত্ত করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে আইনের লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সুশাসনের সব সূচকে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশের মাধ্যমে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে এবং কিছু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অবাধ সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।’