সড়কটির পাশে সারি ধরে স্তূপ করে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন এলাকার গৃহস্থালি, দোকান ও শিল্পকারখানার মিশ্রিত বর্জ্য। জায়গায় জায়গায় পলিথিন, প্লাস্টিক, বাজারের পঁচা-গলা সবজি ও পোড়া আবর্জনার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। এ অবস্থায় পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা নাক চেপে সড়কটি পার হচ্ছেন। এ চিত্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের নাজিরেরবাগ ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প এলাকার।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বাস্তবায়িত ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প সংলগ্ন এ সড়কটি নিয়মিত ব্যবহার করেন হাজারো মানুষ। কিন্তু সড়কের পাশে যত্রতত্র ফেলা বর্জ্য ও ময়লার স্তূপের কারণে ওই সড়কে চলাচলকারীরা প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের সাথে পড়ে রয়েছে মৃত প্রাণীর দেহাবশেষও। তীব্র দুর্গন্ধের কারণে পথচারীরা বাধ্য হয়ে এ সড়কটি এড়িয়ে বিপরীত দিক থেকে চলাচল করছেন।
এ সড়কটি হয়ে ঝিলমিল এলাকায় অবস্থিত যাত্রাবাড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন চুনকুটিয়া মাঠেরকোনা এলাকার বাসিন্দা কাওসার হক। তিনি বলেন, এ সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে কেরানীগঞ্জের মানুষ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সহজে যেতে পারে। অথচ সড়কের এই অংশে শুধু দুর্গন্ধ আর ময়লা। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির এ অবস্থা হলেও কেউ ময়লা অপসারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প সড়কে চলাচলকারী রিকশাচালক কাদের বেপারী বলেন, “এই রাস্তা দিয়া আগে অনেক যাত্রী নিতাম। এখন ময়লার গন্ধে কেউ উঠতে চায় না। একটু চললেই টায়ার আইটকা যায় ময়লায়। মাঝে মধ্যে দেহি যে রাইতের বেলা ময়লা টানার গাড়ি দিয়া এইখানে ময়লা ফেইলা যায়।”
রিকশার যাত্রী সাজ্জাদ ভুইয়া বলেন, “আমার অফিস রাজেন্দ্রপুর, আমি প্রায়ই এই রাস্তা দিয়ে অফিস যাই। এখন পঁচা গন্ধে চলাচল করা মুশকিল। রাস্তায় ময়লা থাকার রিকশা চলে ধীর গতিতে, গত সপ্তাহে সন্ধ্যায় একজন ছিনতাইকারী এখান থেকে মোবাইল- মানিব্যাগ কেড়ে নিয়েছে, কেউ কিছু করতে পারে নাই। আগে ঝিলমিল মাঠে মানুষ হাঁটতাম বিকেলে, এখন আর সাহস হয় না।”
সংযোগ সড়কের পাশের পরিবহন জ্বালানি তেলের দোকানি মো. হারুন জানান, “আমার দোকানটা রাস্তার পাশেই। প্রতিদিন দেখি ভ্যানে করে লোকজন ময়লা এনে ফেলে রেখে যায়। কেউ কিছু বলে না, তাই দিনকে দিন জায়গাটা ভাগাড় হইয়া গেছে। আমরাও তো এই রাস্তা দিয়া যাই, কিন্তু এখন দুর্গন্ধে দোকান চালানোই কষ্টকর।”
নাজিরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা জনি আহমেদ বলেন, বছরখানেক আগেও বিকেলের অবসর সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পের খোলা ময়দানে ঘুরতে যেতাম। এখন দুর্গন্ধ, ময়লা ও অনিরাপদ পরিবেশের কারণে ওই এলাকায় যাই না। তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসী ও পথচারীদের স্বার্থে শিগগিরই সড়কটি থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হোক। এ ছাড়া কেউ যাতে এখানে ময়লা ফেলতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হোক।
এদিকে ওই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় সেখানে বেড়েছে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। হেঁটে বা রিকশায় ধীরগতিতে চলতে গিয়ে অনেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আর্মি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ঝিলমিল সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন কিশোর আমার এক বন্ধুর পথরোধ করে। এরপর তারা বন্ধুর কাছ থেকে মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকে ভয়ে আমি ওই সড়কটি এড়িয়ে চলি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া বলেন, “কেরানীগঞ্জ একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ফলে উপজেলা পর্যায় থেকে এখানকার সকল কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ঝিলমিল সড়কে ময়লা অপসারণের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে পর্যাপ্ত জনবল থাকায় এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো, কিন্তু বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে তা আর আগের মতো সম্ভব হচ্ছে না। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নেই ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। সে কমিটি এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অতিশিগ্রই সিদ্ধান্ত নেয়ার কর্মপরিকল্পনা করছে।”
জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।