ঈদ পণ্য থাবা

ঈদ পণ্যেও এবার সিন্ডিকেটের থাবা!!!

আগানগর কেরানীগঞ্জ জিনজিরা

প্রতিবেদকঃ মোঃ রাহাত হোসেন

ঈদ পণ্য থাবা

আমরা সকলেই জানি বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই আকাশছোঁয়া।  দুঃখজনক হলো, অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন পবিত্র ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে চলেছে।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা বাজার, আগানগরের বউ বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুুরে দেখা যায়, বছর ব্যবধানে কারসাজিতে বেড়েছে ঈদের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা বাজার, আগানগরের বউ বাজারসহ, কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে।  ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই ৩০ টাকা বেড়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়। বাজারে ২০০ গ্রামের ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকা।
গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ৪৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা দরে, যা আগে ১০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকা ছিল। ৪০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট পাস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা, যা আগে ৭৫ টাকা ছিল।
বাড়তি দরের তালিকায় আছে পোলাওয়ের চালও। কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৭০ টাকা, যা এক বছর আগেও ছিলো ১৩০-১৪০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা, যা গত বছর ৭২০-৭৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা গত বছর ১৭০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১১০-১১৫ টাকা ছিল। বাজারে মিলছে ভারতীয় দেশি আর প্যাকেটজাত চিনি, যা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪৫ টাকার মধ্যেই। এছাড়া চিনিশিল্প করপোরেশনের চিনি খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ২০০ গ্রামের মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা।

পণ্যের দাম এর পরিস্থিতিতে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনছেন।  তারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা জিম্মি। রমজানের আগে বেড়েছে রোজায় প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। সেটির প্রভাব কমতে না কমতেই এবার বাড়ছে ঈদ পণ্যের দামও। রোজা-ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতাদের। আর বিক্রেতারা বলেন, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বাজারে। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়ায় দাম বেড়েছে সেমাইসহ অন্যান্য ঈদপণ্যের।

রাজধানীর জিঞ্জিরা বাজারে পণ্য কিনতে আসা আলমগীর বলেন, বাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি নেই।  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিতে বিক্রেতারা কারসাজি করেন। রোজা এলেই পণ্যের দাম বাড়ান। আবার ঈদ আসার আগেও বিক্রেতারা আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল করেন। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি হচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

মসলার বাজারেও দামে যেন নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জানা যায়, এক বছরের ব্যবধানে এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ হাজার টাকা। গত বছর যে এলাচ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫৫০ টাকায় সেটির দাম এ বছর ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া গত ৯ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম। গত বছরের জুনে জিরার কেজি ছিল ৭৭০ টাকা। এ বছর মার্চে সেটি ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। দারুচিনির কেজি ছিল ৪৪০ টাকা, বর্তমানে ১৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩২০ টাকা। গত বছর মসলাটি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৮০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে। রাজধানীর আগানগরের বউ বাজারের মেসার্স  কেরানীগঞ্জ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জানান, এলাচের দাম এক বছরের ব্যবধানে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। গত বছর এলাচের কেজি ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে পাকিস্তানি কিশমিশের দাম ৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকায়, ভারতীয় কিশমিশ ১০০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে। কালো গোলমরিচের দাম ২২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ টাকায়। সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া তার দোকানে দারুচিনি ৬০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৮০০ টাকা, বাদাম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জিঞ্জিরা বাজারের মালেক মিয়া  আরেক বিক্রেতা জানান, প্রতি কেজি গুঁড়া হলুদে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, ৪০ টাকা বেড়ে গুঁড়া মরিচ ৪৮০ টাকায়, গুঁড়া ধনে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারটিতে আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২০০ এবং দেশি নতুন রসুন ১২০ টাকা। তেজপাতা ২০০ টাকা, কাঠবাদাম ৩০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার টাকা ও কাজুবাদাম ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও গরম মসলার দাম বেশি একটা বাড়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত মজুত আছে। তারপরও বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এসব পণ্যের দাম কমে অথবা বাড়ে।

 

আরো পড়ুনঃ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গাড়ির সংঘর্ষ