ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিনে আশঙ্কা জনক ভাবে হাসপাতালে বাড়ছে সেবা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ
সোমবার কেরানীগঞ্জের কয়েকটি হাসপাতাল ঘুড়ে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে বেড়েছে রোগীর চাপ। এ ছাড়া ভর্তি রোগীও রয়েছে অনেক। হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু ও কিশোর। শয্যা সংকট থাকার কারনে অনেক হাসপাতালে ভর্তি নিতে না পেরে অনত্র্য পাঠিয়ে দিচ্ছে ডেঙ্গু রোগী।
কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে অবস্থিত ইবনে সিনা ডায়গনস্টিক সেন্টারের সুপার ভাইজার মো: মাসুদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন আমাদের এখানে গড়ে আরইশো থেকে তিনশ জন ডেঙ্গু টেস্ট করতে আসছে। এদের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো রোগীর ডেঙ্গু পজেটিভ আসছে। যাদের ডেঙ্গু পজেটিভ আসছে তাদেরকে ডাক্তাররা অবজারভেশন করে, যাদের অবস্থা স্থিতীশীল তাদেরকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে বলছে। আর যাদের প্লাটিলেট অনেক কমে যাচ্ছে তাদেরকে ডাক্তারটা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার করে দিচ্ছে।
জিনজিরায় অবস্থিত সাজেদা হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার মো: শাহজালাল ফরাজীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন তাদের হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ জনের ডেঙ্গু টেষ্ট করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১২-১৫ জনের ডেঙ্গু পজেটিভ আসছে। গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন ই ৫-৬ জন করে ডেঙ্গু রোগী সাজেদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
শাহজালাল ফরাজী আরো জানান, গত বছরের চেয়ে এই বছর ডেঙ্গু রোগীর চাপ অণেক বেশি। ডেঙ্গু রোগীর চাপের কারনে হাসপাতালের ডাক্তার নার্স, অফিস স্টাফদের সবাইকে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দেয়ার জণ্য হাসপাতালের সকলের ছুটি বাতিল করে সবাইকে অতিরিক্ত ডিউটি পালন করতে হচ্ছে।
এদিকে কেরানীগঞ্জের কাছাকাছি হওয়ায় এবং সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় কেরানীগঞ্জের অধিকাংশ গরীব ও অসহায় রোগীই সেবা নিতে ছুটে যায়বুড়িগঙ্গার ওপারে মিটফোর্ড হাসপাতলে। মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৭ দিনে হাসপাতালটিতে প্রায় ৫৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে এখনো ২৬০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকিরা সেবা নিয়ে চলে গেছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আরাফাতুর রহমান সাথে কথা হলে তিনি জানান, সারাদেশের মতো কেরানীগঞ্জের ডেঙ্গু পরিস্থিতিও কিছুটা উদ্বেগের। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৩০ জনের মতো রোগী ডেঙ্গু টেষ্ট করাতে আসে। এর মধ্যে ৭/৮ জনের পজেটিভ হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ১২ জন রোগী ভর্তি আছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রে আমরা প্রত্যেকটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বেশি করে ডেঙ্গু নিয়ে জনগনকে সচেতন করার লক্ষে মাইকিং, লিফলেট বিতরন করতে বলেছি। বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বলেছি। ডেঙ্গুতে কেরানীগঞ্জের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন হলো আগানগর, শুভাড্যা ও জিনজিরা ইউনিয়ন। ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের পাশাপাশি জনসাধারনকেও সচেতন হতে হবে। রাতের বেলা অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। বাড়ির আশে পাশে যেন পানি জমে না থেকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সকলের সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে।
এদিকে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর মধ্যে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
শুভাড্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: সুমন জানান, কেরানীগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে জনসংখ্যা বেশি শুভাঢ্যায় । তবে এখানে ডেঙ্গু মোকাবেলায় ইউনিয়ন পরিষদের তেমন কোন কার্যত পদক্ষেপ নেই। লিফলেট বিতরন, মাইকিং তো দূরে থাক নুন্মতম ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রেও করা হয় নি অনেক এলাকায়। অনেকেই ডেঙ্গু সম্পর্কে তেমন অবগত নয়, প্রশাসনের উচিত এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আগানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: ইয়াকুব বলেন, আগানগর ইউনিয়ন অনেক বেশি ভবন, এখানে ডেঙ্গু সচেতনা বেশি দরকার। অথচ এখানে কোন ধরনের পদক্ষেপ ই নেয় হয় না। ফেসবুকে মাঝে মধ্যে দেখি ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশে কয়েকটা জায়গায় লোক দেখানোর জন্য ফগার মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। বাকি অন্য কোন জায়গায় কো খবর ও রখে না। লিফলেট বিতরন বা মাইকিং তো অনেক দূরের বিষয়। ডেঙ্গু যেখানে অনেক উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। সেখানে জনপ্রতিনিধিদের ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলার কোন মানে নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে আমরা নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। বিষয়টা অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখছি আমরা। আমাদের প্রত্যেকটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেয়িছি ডেঙ্গু নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে আমাদের পাশাপাশি জনগনকেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলের বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সকলে মিলে সচেতন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন সম্ভব।