ঢাকার কেরানীগঞ্জ এ রাব্বীনামার পতন
*) রাসেলের খুনের ঘটনায় কাল হলো রাব্বীর
*) রাব্বীর চাদাবাজীতে অতিষ্ঠ ছিলো এলাকাবাসী
*) রাব্বীর ছিলো গোপন টর্চার সেল
*) খুনের ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার
*) রাব্বীর থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন
অবশেষে চাদার ভাগাভাগি নিয়ে বন্ধুকে খুন করার অভিযোগে পতন হলো রাব্বির। খুনের ঘটনায় দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে আফতাব হোসেন রাব্বিকে।
গত মঙ্গলবার রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে রাসেল (৩২) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আফতাব হোসেন রাব্বির নেতৃত্বে তার অফিসে মঙ্গলবার সারারাত ১৫ থেকে ২০ জন রাসেলের উপর নির্যাতন চালায়। বুধবার ভোরে স্বজনরা রাব্বির অফিস থেকে অচেতন অবস্থায় রাসেলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, রাব্বির পক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতো রাসেল। চাঁদার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাব্বি রাসেলকে সন্দেহ করে। যার জের ধরে গত মঙ্গলবার রাতে তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বির অফিসে ডেকে আনা হয় রাসেলকে। সেখানে সবাই মিলে মদ্যপান করে। এরপর রাব্বির নেতৃত্বে রাসেলের উপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন চলে রাতভর।
রাসেলের উপর নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেছ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়, রাসেলের পরনে কোন জামা নাই। খালি গায়ে থাকা রাসেলকে কয়েকজন টানা হেচড়া করছে। প্রচন্ড মারে আধমরা অবস্থায় রাসেল রাব্বিকে বলছে, ‘আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা আমাকে বাঁচান।’
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে রাসেলকে। একজন তাকে গালিগালাজ করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে নিথর দেহ রাসেলের। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। কেউ একজন সেটা মুছে দিচ্ছেন।
স্বজনরা বুধবার ভোরে রাব্বির অফিস থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, রাব্বির বাবা ঢাকার কেরানীগঞ্জ শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী বাসের উদ্দিন। সে শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের ভাতিজা। বছরখানেক আগে বাবা ও চাচার প্রভাব খাটিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেন। পদ পাওয়ার পর বিশাল বাহিনী নিয়ে চলাফেরা শুরু করে রাব্বি। তার বাহিনীর লোকজন স্থানীয় বিচার শালিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানদার ও রাস্তাঘাট থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, তেলঘাট পারভিন টাওয়ারে ছিলো রাব্বির অফিস। তার অফিসে নিয়মিত বসতো নেশার আসর। এখানে বসেই পুরো এলাকার চাদাবাজি নিয়ন্ত্রন করতো রাব্বি।
নিহত রাসেল রাব্বির পক্ষে চাঁদা আদায়ের কাজ করতো। সে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর গ্রামের তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে। তিনি দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
এদিকে রাসেলকে হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাসেলের পিতা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় রাব্বিকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে জনকে আসামী করা হয়েছে।
এদিকে খুনের ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে রাব্বী, স্থাণীয় একাধিক সুত্র দাবী করছে রাব্বী বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। এবং মামলার অণ্যান্য আসামীরাও যে যার মতো ঢাকার বাইরে গা ঢাকা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মিরাজুর রহমান সুমন বলেন, বিপু ভাই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না, সেবকলীগ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। ব্যাক্তির চেয়ে দল বড়, কোন অন্যায়কারী, চাদাবাজ, মাদকব্যবসায়ীকে আমরা প্রশ্রয় দেব না,ঠাই দেব না।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আরো পড়ুনঃ হত্যাকান্ডের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রাব্বি বহিষ্কার