ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে আজ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তিন দিনের সফরে আসছে। এ সফরে থাকছেন বাংলাদেশে খুব পরিচিত ও বহুল আলোচিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের পথে হাঁটা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারের পথ ও কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাবে মার্কিন এই প্রতিনিধি দলের সফরে। ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের আগে দিল্লি হয়ে আসায় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন মহলের আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড লুর ভারত সফরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় থাকছে। কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলেছেন।
এর আগে টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত মে মাসে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসেছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরও লু ঢাকা সফর করেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের প্রথম সফর। অবশ্য ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারকে সহযোগিতার বার্তা পাঠিয়েছে। এই সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন প্রতিনিধি দল এর এই সফরটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু-দিক থেকেই এই সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মধ্যে বিগত হাসিনা সরকারের সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্ক বলা যায় নিম্নপর্যায়ে রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত ইস্যুতেও আলোচনা গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তিন দিনের (১০-১৩ সেপ্টেম্বর) দিল্লি সফর করে আজ শনিবার ঢাকায় লুর মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ডোনাল্ড লু ভারতে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যোগ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আগামী রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সভায় অংশ নেবেন। ওইদিন বিকেলে প্রতিনিধিদল প্রধান নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে ডোনাল্ড লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি কোনও ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যেটি আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ন করে। আমি শুধু এটি বলতে পারি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মার্কিন প্রতিনিধি দল আসছে; তারা যে এই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় সেটির বড় প্রতিফলন ঘটছে এর মাধ্যমে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পরিচয় দেখলে বোঝা যায় এই আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মধ্যে সীমিত থাকবে না। আমরাও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করবে।
আরোও পড়ূনঃ নিপীড়িত সাংবাদিক দের তালিকা করবে ‘জার্নালিস্টস ফর জাস্টিস’