কেরানীগঞ্জে পৃথক ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু: এক হত্যাকাণ্ড, এক দুর্ঘটনা

কেরানীগঞ্জ ছিনটাই ও অপরাধ দুর্ঘটনা

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঘন্টার ব্যবধানে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে মডেল থানা পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজন অটোরিকশাচালক আমির আলী (৩৮) এবং অপরজন নির্মাণ শ্রমিক ইমরান (১৭)। দুটি ঘটনা এলাকাবাসী ও পুলিশের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

 

অটোরিকশা ছিনতাইয়ে হত্যা:

নিহত আমির আলী ভোলা সদর থানার নুর ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন এবং পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুর ২টায় কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া শুটকিরটেক এলাকার রাস্তার পাশে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা স্যান্ডেল ও ছুরির কাভার দেখে সন্দেহ হলে এলাকাবাসী খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের ঘাসের মধ্যে আমির আলীর রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, নিহতের শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেছেন।

 

নির্মাণ শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু:

একই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় কালিন্দী ইউনিয়নের পশ্চিম ভাগনা চিতিখোলার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে নির্মাণ শ্রমিক ইমরানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নীলফামারীর জলঢাকার উত্তর বিরুল গ্রামের ফজল শেখের ছেলে ইমরান ভাগনা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে পাইলিং শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজ করার সময় তার ছিঁড়ে পাইলিংয়ের লোহার খাঁচা ইমরানের মাথার ওপর পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্বজনদের দাবি, ভবনটি কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছিল। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কোনো সেফটি গিয়ার, বিশেষ করে হেলমেট ছিল না। সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে হয়তো ইমরানের মৃত্যু এড়ানো যেত।

 

পুলিশের বক্তব্য:

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সোহরাব আল হোসাইন জানান, আমির আলীর মৃত্যুকে একটি স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে, ইমরানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং ভবনের নির্মাণ প্রক্রিয়ার আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুটি ঘটনায়ই পৃথক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।

 

সচেতনতা ও নিরাপত্তার দাবি:

এই ঘটনায় এলাকাবাসী ও শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অটোরিকশা চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্মাণ শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।