কেরানীগঞ্জে একটি আবাসন প্রকল্পের দখল থাকা জলাশয় ও কৃষিজমি উদ্ধারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অভিযানের সময় হামলা করেছে ভূমিদস্যুরা। এ সময় পেশাগত দায়িত্বে থাকা দুই সাংবাদিককে মারধর ও তাঁদের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। হামলায় দুই সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে হামলার অভিযোগে দুইজনকে আটক করে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ঘাটারচর এলাকায় ‘মিলেনিয়াম সিটি’ আবাসন প্রকল্পের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক মাজহারুল মিলন (৪৫) ও ক্যামেরাপারসন জহিরুল ইসলাম (৪২) এবং রাজউকের এক্সকাভেটর চালক আবদুল খালেক (৫৫)।
হামলার কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম। এ সময় হামলাকারীরা রাজউকের গাড়ি ও খননযন্ত্র ভাঙচুর করে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১ টার দিকে কেরানীগঞ্জের মিলেনিয়াম সিটির ভেতরে অরবিট নামে ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড এক্সকাভেটর দিয়ে অপসারণকালে ১০–১২ ব্যক্তি বাধা দেন। রাজউকের কর্মকর্তারা তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে অভিযান চলমান রাখেন। একপর্যায়ে ৩০ থেকে ৩৫ ব্যক্তি জড়ো হয়ে এক্সকাভেটর চালক জহিরুলকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় তাঁরা রাজউকের কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত ও দুই সাংবাদিককে মারধর করেন।
জানা গেছে, গত বছরের ২২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের টোটাইল খালসংলগ্ন নিচু কৃষিজমি ও জলাশয়ে মাটি ভরাট এবং অননুমোদিত ‘মিলেনিয়াম সিটি’ আবাসন প্রকল্পের সব কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত খাল ও খালসংলগ্ন নিচু কৃষিজমি-জলাশয়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ও আবাসন প্রকল্পের মাটি ভরাটের ফলে খালের ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। টোটাইল মৌজায় অবস্থিত জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল ও নিচু কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন প্রতিরোধ বিষয়ে ব্যবস্থা জানিয়েও প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আহত সাংবাদিক মাজহারুল মিলন বলেন, রাজউকের অভিযানের সময় তাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ ভূমিদস্যুরা তাঁদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। তাঁরা তাঁদের মারধর ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। মিলেনিয়াম সিটির মালিক তাজুল ইসলামের নির্দেশে ৩০ থেকে ৩৫ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের ভূমিদস্যু ও দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। অভিযান শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। অভিযান শুরুর দুই ঘণ্টা পর মাত্র চারজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশের এ ভূমিকা রহস্যজনক।
আহত এক্সকাভেটর চালক আবদুল খালেক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি উচ্ছেদের কাজ করছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন দুর্বৃত্ত বৃষ্টির মতো তাঁর ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় এক্সকাভেটরের কাচ ভেঙে তাঁর ডান পায়ে ঢুকে যায়। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে মিলেনিয়াম সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে সকাল থেকে আমি অন্যত্র ছিলাম। কে বা কারা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
রাজউকের উপনগর–পরিকল্পনাবিদ-১ (নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা) নবায়ন খীসা বলেন, থানা থেকে চিঠির মাধ্যমে তাঁদের নিশ্চিত করা হয়েছিল, অভিযানে পুলিশ সদস্যরা থাকবেন; কিন্তু অভিযান শুরুর সময় কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা অভিযানস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রাজউকের অভিযানে দায়িত্বরত কেরানীগঞ্জের আটিবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আনোয়ার বলেন, ‘আজ দুপুর ১২টার দিকে আমরা রাজউকের অভিযানের বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিল।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাব আল হোসাইন বলেন, রাজউকের উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়টি তারা ঘটনাস্থলে পৌছে বেলা ১২ টার দিকে আমাদের অবহিত করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফোর্স পাঠিয়ে দেই। আমি ১২ টায় জানতে পারলে ১০ টায় কিভাবে ফোর্স দেব। তিনি আরও জানান, হামলার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাজউকের উচ্ছেদ অভিযানের চিঠির বিষয়ে তিনি জানেন না। সকালে তাঁদের একটি জরুরি সভা ছিল। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’