ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ জিহাদ হত্যা মামলার আসামী, ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা আরো ২ টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও বিগত সরকারের কট্টর সমর্থক মেম্বারকে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন । এতে আগানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন ছাত্র আন্দোলনে নিহত জিহাদ হত্যা মামলার ৭০ নং আসামী ও ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: শাহিন ও জিনজিরায় চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও নসরুল হামিদ বিপুর একান্ত আস্থাভাজন মো: রায়হান উদ্দিন। এ নিয়ে এলাকা বাসীর মধ্যে চরম হতাশা ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়ার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ ও ১০২ অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য তিনজনকে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন জিনজিরা ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. রায়হান উদ্দিন, শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ড সদস্য সাথী আলী ও আগানগর ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহিন ।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনসাধারন, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও ছাত্রদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, যেই জুলাই আগষ্টে সাধারন ছাত্রদের ত্যাগের বিনিময়ে রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ঐ ছাত্রদের ওপর হামলায় করা মামলার আসামিরা ও হামলাকারীরা কিভাবে নতুন বাংলাদেশের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হয়? গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, আগানগর ইউনিয়নের বর্তমান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান শাহীন মেম্বার, জুলাই আগষ্টে নিহত ছাত্র রিয়াজ হত্যায় দায়ের করা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলার ৭০ নং আসামী। এছাড়া দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা অপর একটা মামলার আসামি, উক্ত মামলায় জামিনে রয়েছেন বর্তমানে। এছাড়াও টঙ্গী থানায় ছাত্রদের ওপর হামলার অপর একটি মামলায় ও তার জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বা এজাহারভুক্ত কোনো ব্যক্তি গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হতে পারেন না। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ ধারা ৩৪ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন বা দণ্ডিত হন, তবে তিনি পদে থাকার যোগ্য নন। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ ধারা ৭ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে বা দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে, ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্যকে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো ফৌজদারি মামলা থাকে, তাহলে তিনি এ দায়িত্ব পালনের জন্য অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
অপর দিকে জিনজিরা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের দায়িত্ব পাওয়া মো: রায়হান উদ্দিন ছিলো সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর একান্ত আস্থা ভাজন। বিগত সময়ে রায়হানের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। এ নিয়ে জনগনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আগানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: আবুল হোসেন বলেন, নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে নতুনরা। পুরাতন যাদের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ, যারা ছাত্র হামলার একাধিক মামলার আসামি তাদের কেন প্রশাষন দায়িত্ব দেয়? তাদের দ্রুত বহিষ্কার না করলে আমরা উপজেলা প্রশাষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিনজিরা ইউনিয়নের বিএনপির একজন নেতা ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই রায়হান বিপু সাহেবের প্রভাব দেখিয়ে এলাকায় নানা অত্যাচার করেছে। জুলাই আগষ্টে ছাত্রদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। নানা অনিয়ম দুর্নিতী করেছে। এরাই আবার এখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছে। এখানে ষড়যন্ত্র অথবা সুবিধা থাকতে পারে। অন্যথায় এরা এভাবে দায়িত্ব পেতে পারে না।
কেরানীগঞ্জে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সোহানুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের গ্রেপ্তার করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা ভেবে নিবো প্রশাসনও আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করতে চায়। তাঁদের আমরা কখনও সফল হতে দিবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেরনীগঞ্জের সমন্বয়ক আল-আমিন মিনহাজ বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের, দুর্নীতিবাজদের আমরা কোন ভাবেই আবারো প্রতিষ্ঠিত হতে দিবো না। আমরা ইউএনওর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের দোসররা কোন সরকারি দপ্তরের দায়িত্বে বহাল রাখা হলে আমরা সেটি কঠোর হাতে দমন করবো। কেরানীগঞ্জের ছাত্র সমাজ এইসব ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা রুখে দিবে।
এ বিষয়ে জানতে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়া জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই, তাছাড়া মামলার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন ডকুমেন্টস ও ছিলো না। মামলার ব্যাপারে ডকুমেন্টস পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিবো।