চলতি বর্ষায় আট কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার গাছের চারা লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ড. ফারহিনা বলেন, দেশের বন, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ ১৪ দশমিক এক শতাংশ হতে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ লক্ষ্যে সরকার বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ২০০৯-২০১০ হতে ২০২২-২৩ আর্থিক সাল পর্যন্ত মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ৪০২ হেক্টর ব্লক এবং ৩০ হাজার ২৫২ সিডলিং কি.মি. স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং ১১ কোটি ২১ লক্ষ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সচিব বলেন, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে। সারা দেশে বৃক্ষের পরিমাণ ও বনখাতে কার্বনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য এ বছর জাতীয় বন জরিপ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূল, বাঁধ এবং পোল্ডারে বনায়নের মাধ্যমে উপকূলজুড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সবুজ বেষ্টনী সৃজন করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত এক লাখ ৬০ হাজার ৬৯৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে ৩২৬ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ১১৪ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়েছে এবং বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের কোনো কোনো জায়গায় আমরা বনায়ন করতে পারি, কী কী গাছের চারা লাগাতে পারি, তা ঠিক করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মিলে আমরা একটা ছক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। আমরা সবুজ এলাকা হারিয়েছি, জলাশয়ও নেই। কাজেই আমরা মনে করি, নগর উন্নয়নে আমাদের যে মূল পরিকল্পনা আছে, সেটার মধ্যে এসবও নিয়ে আসতে হবে। আমরা যেটা করতে পারি, কত শতাংশ থাকতে হবে, সেটা নির্ধারণ করতে পারি। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যে মান আছে, সেটা বাংলাদেশে কতটুকু কার্যকর করতে পারব; আমরা জানি না। ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে আমরা কীভাবে সেই জায়গাটা বের করব? এরইমধ্যে আমরা কিছু কিছু কাজ শুরু করেছি।
মন্ত্রী বলেন, রাজউকের যে পূর্বাচল প্রকল্প আছে, সেখানে একটি বড় অংশ আমরা বনায়নের জন্য রেখে দিয়েছি ১৪০ একর ভূমি। এটা বনায়নের জন্য আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। কিন্তু পুরো এলাকা যদি কংক্রিট হয়ে যায়, তাহলে সেখানে কোনো সুযোগ আমাদের থাকছে না।
তিনি বলেন, পরিবেশগত যে ন্যূনতম চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে আমরা মনে করি, সেটা আমরা করতে পারব। সেটা করা না হলে ঢাকা শহর তার বাসযোগ্যতা হারাবে।
পরিবেশ দিবসের নানা কর্মসূচি
প্রতি বছরের মতো এবারও ৫ জুন (বুধবার) বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা আয়োজন করা হয়েছে।
পরিবেশ সচিব বলেন, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ঘোষণা মোতাবেক ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে এবং ‘জেনারেশন রেস্টোরেশন’ শ্লোগানে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার সকাল ১০টায় দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন সচিব।
আরো পড়ুনঃ দেশের জনগণকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি দান করলেন প্রধানমন্ত্রী