কেরানীগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

কেরানীগঞ্জ জিনজিরা শিক্ষা

কেরানীগঞ্জের জিনজিরা পীর মোহাম্মদ  পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো আবু রায়হানের অব্যাহতি চেয়ে গত রবিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী অংশ নেয় ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, নানা অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান তিন বার বরখাস্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা তছরুপ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমপিও ভুক্ত করতে অনিয়ম,নগদ অর্থ দাবি, অর্থ আত্মসাত সহ নানাবিধ  অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের কারণে তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা আরও জানান, দীর্ঘদিন আবু রায়হান বরখাস্ত থাকার পর সম্প্রতি তিনি পুনরায় বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বাধা প্রদান করেন। পরে গত রবিবার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় চত্বরে আবু রায়হানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ❝তারা কোন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষককে তাদের ঐতিহ্যবাহী স্কুলে চান না। ইতোমধ্যে আবু রায়হান স্যারের কারণে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই তাদের দাবি প্রধান শিক্ষক আবু রায়হানকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হোক।❞

আন্দোলনে আসা আর এক শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার বলেন, ❝২০২১ সালে সরকার শিক্ষার্থীদের ফর্ম ফিলাপের টাকা বাবদ ১৮০০ টাকা করে ফেরত দেয়। কিন্তু আবু রায়হান স্যার আমাদের শিক্ষার্থীদের সেই টাকার কানাকড়িও ফেরত দেন নি।❞

নাম গোপন রাখার শর্তে  বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র   শিক্ষক জানান, ❝ প্রধান শিক্ষক আবু রায়হানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের রেজুলেশন বই, ভাউচার, ল্যাপটপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব, ট্রাস্ট ব্যাংকের সীলমোহর জালিয়াতি, বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত, শিক্ষকদের পিএফ এর টাকা আত্মসাত ও সরকারি বই বিক্রিসহ নানা অনিয়মের  অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।❞

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবিনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,❝ আপনারা নিজেরাই এখানে থেকে পরিস্থিতি দেখেছেন।আমি চাই  এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান হোক । পরিচালনা পর্ষদ এই ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমি আশাবাদী। ❞

নবম শ্রেণির ছাত্রী সাফিয়া রহমানের বাবা বলেন,❝
❝এর আগেও রায়হান সাহেব নানা অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। তার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে যুগান্তর সহ নানা পত্রিকা ও টেলিভিশনে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।  তাই আমি চাই নতুন কেউ আসুক।বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন দ্রুত বিষয়টির সমাধান করেন। ❞

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন,❝ আমি এ ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। বিধি অনুযায়ী বরখাস্ত কোন শিক্ষকের বিষয়ে যদি ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত কোন সুরাহা না হয় তাহলে সে তার প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে পারবেন। এছাড়া তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা সেটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।❞

আবু রায়হান স্যার বলেন,❝আমার কাছে সরকারি চিঠি আছে।নিয়ম অনুযায়ী আমি বিদ্যালয়ে যোগ দান করতে গিয়েছিলাম কিন্তু বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, অভিভাবক এর কারণে সেখানে পরিবেশ অন্য রকম হয়ে যায়। তাই আমি সেখান থেকে চলে আসি। ❞তিনি এর বাইরে আর কিছু বলতে চান নি।

বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের কোন সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

মো নাজিউল্লাহ ভূইয়া
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি