আবহমান বাংলার সহচরী কেরানীগঞ্জ এ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে কয়েকশ গজ দূরেই অবস্থিত জিঞ্জিরা প্রাসাদ। ঐতিহাসিক এই পুরাকীর্তি যেন পলাশীর যুদ্ধের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ঘসেটি বেগমকে বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে মারার আগ পর্যন্ত এই প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়। জিঞ্জিরা প্রাসাদের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরের লুঙ্গি,জাহাজ শিল্প,নির্মাণ শিল্প,গার্মেন্টস শিল্প প্রসিদ্ধ এই জনপদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।
ব্যস্ততম এই নগরীকে একটি আধুনিক এবং পরিকল্পিত নগরী হিসাবে গড়ে তোলার এখনই সময়। ইতোমধ্যে জিঞ্জিরা,আগানগরসহ বেশ কিছু স্থানে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে। পরিকল্পনা এবং সমন্বয়ের অভাবে অনিরাপদ এলাকায় প্রতিবছর শুধুমাত্র অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক লোক হতাহত হয়। আমি যখন এসিল্যান্ড হিসাবে কাজ করেছি,তখন একটা রাসায়নিক গুদামে দগ্ধ হয়ে ২৩ জন নিহত হয়।এই এলাকায় কাজ করার সুবাদে এখানকার সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সরেজমিন ধারণা লাভ করেছি।
আগানগরের আলম মার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমলগুলো এমন ভাবে নির্মিত হয়েছে যেখানে আকাশ দখলের প্রতিযোগিতা হয়েছে। প্রথম তলায় দুপাশে কিছু জায়গা থাকলেও দ্বিতীয় তলা থেকে উভয় দিকের ভবনগুলো আকাশ দখল করেছে। যার ফলশ্রুতিতে অনিরাপদ বিদ্যুৎ সংযোগ মারাত্মক হুমকি হয়ে বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের। এই গার্মেন্টসপল্লীতে একবার অগ্নি দূর্ঘটনার কবলে পড়লে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি যেমন হবে, তেমন অনেক প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকবে। সবচেয়ে বড় বিষয় একবার অগ্নিসংযোগ ঘটলে তা নিভানোর জন্য গাড়ি প্রবেশ বা পানির পাইপ নেয়ার কোন জায়গা রাখা হয়নি। তাই এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ উন্নত করার জন্য এখনই নেমে পড়তে হবে।
অগ্নি দুর্ঘটনার সাথে সাথে পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিসা ফ্যাক্টরি, চামড়া শিল্প, ডায়িং ফ্যাক্টরির দূষণ রোধে মনিটরিং জোরদার অগ্রাধিকার পাবে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় তুলনামূলক জনবসতি বেশি কিন্তু কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এখন গড়ে উঠছে। নীতিমালা প্রণয়ন করে পরিকল্পিত নগর হিসেবে এখন পদক্ষেপ নিলে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। জিঞ্জিরা,আগানগর,শুভাড্যা,কালিন্দী ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাস করে রাস্তা প্রস্তস্থ করতে হবে।
বিভিন্ন শিল্পের জন্য আলাদা জোনিং করতে হবে। শুভাড্যা খাল,সিংহ নদীসহ কেরানীগঞ্জের ৫৫ টি খাল উদ্ধার করে ভারসাম্যপূর্ণ নগরায়ণ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জ উন্নয়ন নিয়ে রোডপ্যাপ প্রণীত হলেও সেটি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের যুব এবং তরুণ সমাজ খুবই উদ্যমী। এই উদ্যোমী তরুণদের প্রণোদনা দিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে হবে। আমরা যদি কেরানীগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে পারি,তাহলে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ উপজেলা সত্যিকার অর্থেই আলোকিত নগরী হিসাবে গড়ে উঠবে।
আর এই আলোকিত কেরানীগঞ্জ গড়ার প্রত্যয়ে ‘কেরানীগঞ্জের আলো’ পত্রিকা সাহসী এবং গঠনমূলক সহচরী হিসাবে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।
লেখক: কামরুল হাসান সোহেল
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাজিরা,
সাবেক এসিল্যান্ড কেরানীগঞ্জ মডেল।
আরো পড়ুনঃ কেরানীগঞ্জে ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর অভিযোগ