ওস্তাদ, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে’—চোখের সামনে রিক্সা চালককে চাপা পড়তে দেখে বাস থামানোর জন্য অনুরোধ করেন বাসের হেল্পার। তার অনুরোধ স্বত্তেও বাস থামননি বাস ড্রাইভার। রিক্সা চালককে বাসের সাথে বাজিয়ে নিয়ে বাস টান দেয়ার পর কিছু দূর সামনে যাওয়ার পরেই বাসার চাকায় পিস্ট হয়ে প্রান যায় রিক্সা চালক শিপন। বাসটিকে স্থানীয়রা আটক করলেও কৌশলে পালিয়ে যায় বাস ড্রাইভার। নিহত শিপন (৩৪) রাজধানীর জুড়াইন এলাকায় বসবাস করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ঈদের দিন সন্ধ্যায় শুভাঢ্যার
হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন বলেন , ‘আমাদের অটোরিকশাটি হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সার্ভিস লেন দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ওই সড়কে বাসটি যাওয়ার চেষ্টা করলে অটোরিকশার চাকার সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক আকুতি করে বাসটি থামাতে বলে। কিন্তু বাসচালক (২৪) অটোরিকশাচালকের আকুতি উপেক্ষা করে বাস টান দেওয়ায় অটোরিকশাটি দুই ভাগ হয়ে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক বাসে উঠে চালককে বাস থামাতে বলেন। তাতেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে বাস থেকে নামার সময় অটোরিকশাচালক সার্ভিস লেনের বিভাজকের ওপর পা রাখলে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে বাসের পেছনের দিকের চাকার নিচে পড়ে যান। এ সময় বাসটি অটোরিকশাচালকের পা ও বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়।’
অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন আরও বলেন, ‘বাসচালক যদি শুরুতেই বাসটি থামিয়ে একটু পেছনে যেতেন, তাহলে আর এ দুর্ঘটনা ঘটত না। সে ধৈর্যহীন হয়ে বাসটি টান দেওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটল।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা মো. সাব্বির বলেন, ‘অটোরিকশাচালককে বাসের চাকায় চাপা পড়তে দেখে আমরা বাসটিকে থামানোর জন্য বলি। বাসের সহকারীও বলছিলেন “ওস্তাদ, টান দিয়েন না, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে।” এরপরও ওই চালক থামেননি। একপর্যায়ে সে ওই অটোরিকশাচালকের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী অটোরিকশাচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা মোটরসাইকেল চালক শাহীন আলম বলেন, ‘আমি মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখতে পাই, বাসের পেছনের চাকার দিকে এক ব্যক্তি চাপা পড়েছে। এ সময় বাসচালকের সহকারী, কয়েকজন যাত্রী, আমি ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী বাসটি থামাতে বলি। তবে চালক কারও কথা না শুনে বাসটি টান দেন। এ সময় আমিসহ আরও এক বাইকচালক বাসটিকে ধাওয়া করি।
একপর্যায়ে নাজিরেরবাগ ঝিলমিল এলাকায় উড়ালসড়কের ওপর বাসটির সামনে মোটরসাইকেল রেখে পথরোধ করি। এ সময় বাসের চালক ও সহকারী বাস থেকে নেমে দৌড়ে কৌশলে পালিয়ে যান।’
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক পীযূষ রায়। তিনি বলেন, বাসটি আটক করা হয়েছে। বাসের চালক ও সহকারী কৌশলে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে।
সুত্র: প্রথম আলো।