ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিএনপির এক নেতার একাধিকবার বাধা দেয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি পন্য বিক্রি। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ঐ এলাকার নিন্ম আয়ের মানুষেরা। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পারগেন্ডারিয়া এলাকায়।
টিসিবির পন্য নিতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিস ও তার লোকজন টিসিবি পণ্য নিজেরা বিক্রির জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের এক নারী প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে “আওয়ামী লীগের দোসর” আখ্যায়িত করে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
আজ রোববার (২ মার্চ) দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পারগেন্ডারিয়া এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শনিবার দুপুরে একই স্থানে বিএনপি নেতা আনিস ও তাঁর অনুসারীরা টিসিবির পণ্য বিক্রিতে বাধা দেন। এতে ডিলাররা বাধ্য হয়ে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।
টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কথা শুনেও ডিলারের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভ্যানচালক কাদের হোসেন (৪৫)। তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন,”দিনভর রিকশা-ভ্যান চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। বাজারে চাল, তেল, চিনি সবকিছুর দাম বেশি। টিসিবির পণ্য কম দামে পাওয়ার আশায় এসেছিলাম, কিন্তু এসে শুনি বিক্রি বন্ধ। আমরা গরিব মানুষ, বাজারের দোকানে অত দামে তেল-চাল কিনতে পারবো না। টিসিবির এই জিনিস না পেলে পরিবার নিয়ে খাবারের কষ্ট করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “নেতারা নিজেদের স্বার্থের জন্য গরিবের পেটে লাথি মারছে। আমরা তো রাজনীতি বুঝি না, আমরা শুধু আমাদের বউ বাচ্চার জন্য একটু সস্তায় চাল-ডাল কিনতে চাই।”
টিসিবির পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হন নারী শ্রমিক জরিনা খাতুন (৩৮)। তিনি বললেন, “সকালে কাজের ফাঁকে এসেছিলাম, শুনলাম টিসিবির পণ্য বিক্রি হবে। দুপুরের পর আবার আসলাম, এসে দেখি দোকান বন্ধ! বাজারের দোকানে তো এত দাম যে, কিছু কেনার সাহস পাই না। কাজ করে দিনে ৩৫০-৪০০ টাকা পাই, এই টাকা দিয়ে তেল-চাল কিনলে সংসার চলবে কীভাবে? আমরা কি গরিব বলেই আমাদের হক মেরে খাবে?” তিনি আরও বলেন, “আমরা চুরি করি না, ডাকাতি করি না। কিন্তু আমাদের মতো মানুষের জন্য যে জিনিস সরকার দেয়, সেটাও নিতে পারবো না? পেটে ক্ষুধা নিয়ে আর কতদিন চলবো?”
টিসিবির পণ্যের ডিলার চন্দ্রপুরী স্টোরের পরিচালক সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, গত শনিবার আমরা টিসিবির পণ্য বিক্রি করছিলাম। এসময় কিছু লোকজন নিজেদের বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে আমাদের কাজে বাঁধা দেন। এসময় সেখানে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রতিনিধি রোকেয়া ম্যাডাম এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এসময় ওই ব্যক্তিরা তার সাথে অশোভন আচরণ করেন। তার উপর চড়াও হন। একপর্যায়ে আমরা রোকেয়া ম্যাডামকে সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাই। তিনি আরও বলেন,”বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আজ রোববারও পণ্য বিক্রি শুরু করতে গেলে ওইসব নেতা-কর্মীরা আবার বাধা দেন। বাধ্য হয়ে আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পারগেন্ডারিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণ নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অনিয়ম বন্ধ না হলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত এ সহায়তা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাবে না। এতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্মের প্রবণতা বেড়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় সাংবাদিকদের বলেন, টিসিবির পণ্য বিক্রি করবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ডিলার। অন্য কারও টিসিবির পণ্য বিক্রি করার সুযোগ নেই। কোন ব্যক্তি এটি করতে পারে না। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, টিসিবির অধীনে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যে শুভাঢ্যা পারগেন্ডারিয়া এলাকায় দুইজন ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলছিল। প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ কেজি চাল, ২ কেজি তেল ও ২ কেজি চিনি। গত শনিবার ডিলার পণ্য বিক্রি করার সময় একটি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে পণ্য বিক্রিতে বাঁধা দেন। এসময় সেখানে দায়িত্বে থাকা আমাদের কার্যালয়ের কার্য সহকারী রোকেয়া মাহমুদ প্রতিবাদ জানালে তারা চড়াও হয়ে তাকে হুমকি-দুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়। বিষয়টি সে আমাকে জানালে আমি তাকে সেখান থেকে চলে আসতে বলি। এ অবস্থায় ওইসব লোকজনদের হুমকির মুখে রোকেয়া পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখে সেখান থেকে চলে আসেন। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আজ রোববার পণ্য বিক্রি করতে গেলেও ওইসব ব্যক্তি পুনরায় ডিলারদের বাঁধা দেন। ওইসব ব্যক্তিদের বাঁধার মুখে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে অমি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।