ভাগ্নেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেফতার মামা

ছিনটাই ও অপরাধ

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অপহৃত শিশু তুষারকে উদ্ধার ও অপহরণকারী মামা শাহরিয়ার রহমান (১৯)’কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১০ সদস্যরা।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার পল্টন থানার কাপ্তান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১০’র কোম্পানী কমান্ডার, সিপিএসসি স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্র মো. তুষার (১০) তার মায়ের সাথে নানাবাড়ি একই থানাধীন কদমপুরে বেড়াতে যায়। তার কয়েকদিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠে খেলতে গিয়ে বাড়িতে না ফিরলে তুষারের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা একটি মামলা দায়ে করেন।

এরআগে ২৪ সেপ্টেম্বর, তুষারের নানি নাসিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইলফোনে অজ্ঞাত নামক একটি ইমো আইডি থেকে ফোন করে তুষারকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং প্রথমে তুষারের খাওয়া-দাওয়ার খরচ বাবদ ৭ হাজার টাকা দাবি করলে তুষারের নানি নাসিমা বেগম অপহরণকারীর বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠান। টাকা পাওয়ার পরপরই ইমো আইডিটি বন্ধ করে ফেলে।

পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত অপহরণকারী পুনরায় ইমো আইডি থেকে তুষারের দাদার ব্যবহৃত মোবাইলে করে তুষারের মুক্তিপণ ২ লক্ষ টাকা দাবি করে অন্যথায় তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারের বাবা তার আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে বিকাশ দুই লক্ষ টাকা পাঠান। অপহরণকারীর টাকা পাঠানের পর ভিকটিম তুষারকে ফেরত চাইলে অপহরণকারী ভিকটিম তুষারকে ফেরত না দিয়ে পুনরায় আরও ২ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

ভিকটিম তুষারের বাবা আরও টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে পরামর্শ করে গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এদিকে অপহরণকারী ভিকটিমের বাবার সাথে যোগযোগ করে এবং আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ভিকটিমের বাবা ভিকটিম তুষার দেখতে চাইলে অপহরণকারী ভিকটিমের বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমের বাবাকে প্রেরণ করে এবং ভিকটিমকে জীবিত পেতে হলে দ্রুত আরও ২ লক্ষ টাকা দিতে বলে।

এসময় আবার ভিকটিমের বাবা তার অন্যান্য আত্মীস্বজদের নিকট হতে ধার-দেনা করে বিভিন্ন অপহরণকারীদের কয়েকটি বিকাশ নম্বরে আরও ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী ইমো আইডিটি বন্ধকরে ফেলে। পরবর্তীতে র‌্যাব-১০ একটি আভিযানিক দল তুষারের অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারকে দ্রুত উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এবং ১৩ অক্টোবর রবিবার ভোর র‌্যাবের আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার পল্টন থানাধীন কাপ্তান বাজার এলাকা হতে অপহরণকারী শাহরিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয় স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া শাহরিয়ারের ভাড়া করা একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বাড়ির ৩য় তলার একটি কক্ষ হতে অক্ষত অবস্থায় ভিকটিম তুষারকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় বাসা হতে মুক্তিপণের নগদ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, আসামি শাহরিয়ার তুষারের মামা (মায়ের খালাতো ভাই)।

ঘটনার দিন তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে খেলতে যায়। সেখানে খেলাধুলা শেষে শাহরিয়ার তুষারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি অটোরিকশাতে করে হাসনাবাদে শাহরিয়ারেরা ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সেখানে আটকে রাখে। ভিকটিম তুষার বাড়িতে বা তার মায়ের কাছে যাওয়ার কথা বললে শাহরিয়ার ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও বিভিন্ন প্রকার শিশুখাদ্য কিনে দিতে এবং শীঘ্রই তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।