৮ মাসের অপহৃত শিশুকে ৮ ঘণ্টায় উদ্ধার করলো র‌্যাব

কেরানীগঞ্জ ছিনটাই ও অপরাধ

ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থেকে ৮ মাসের শিশু অপহরণের চাঞ্চল্যকর ঘটনার মামলা রুজু হওয়ার ৮ ঘণ্টার ভেতর শিশু সাইফানকে শরীয়তপুর জেলার পালং এলাকা হতে উদ্ধার করতে সফল হয়েছে র‌্যাব। এসময় শিশু সাইফানকে অপহরণকারী তানজিলা আক্তার পারভীনকে গ্রেফতার করা হয়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর ইউনিয়নের ইস্পাহানী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাসকারী এনামুল হক মজুমদার ও সাকিলা এনাম দম্পত্তির তিন সন্তানের মাঝে কনিষ্ঠ সন্তান সাইফান। গত ১২ অক্টোবর (শনিবার) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টা ৩০ মিনিটে অপহরণকারী তানজিলা আক্তার পারভিন প্রথমে  সাকিলার বাসায় এসে তার অসহায়ত্বের কথা বলে শুধু থাকা খাওয়ার বিনিময়ে বাসায় কাজের জন্য আশ্রয় চেয়ে আকুতি মিনতি করে। পরবর্তীতে সাকিলা পারভীনের অসহায়ত্বের কথা শুনে সরল বিশ্বাসে মানবিক দিক বিবেচনা করে পারভীনকে তার বাসায় আশ্রয় দেয়। পরদিন রবিবার সকাল ১১টা দিকে সাকিলার মেজো ছেলে আহনাফ (০৬) আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে পারভীন আহনাফ ও সাকিলার ছোট ছেলে সাইফান (০৮ মাস)’কে নিয়ে আইসক্রিম আনার জন্য তাদের বাসার নিকটবর্তী একটি দোকানে যায়। তার কিছুক্ষণ পর আহনাফ আইসক্রিম নিয়ে একা বাসায় গেলে আহনাফের মা সাকিলা আহনাফকে জিজ্ঞাসা করে যে, পারভীন ও সাইফান কোথায়। অতঃপর আহনাফ তার মাকে জানায় যে, পারভীন আহনাফকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে বলেছে তুমি বাসায় যাও আমি সাইফান কে নিয়ে আসতেছি তাই আহনাফ আইসক্রিম নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। অতঃপর সাকিলা অনেকক্ষণ আপেক্ষা করার পর পারভীন ও

সাইফানের কোন খোঁজখবর না পেয়ে সম্ভাব্য আশপাশের সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথায় সাইফান ও পারভীনের সন্ধান না পেলে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সাইফানের কোন সন্ধান না পেলে সাকিলা বুঝতে পারে যে, পারভীন সাইফানকে অপরহণ করেছে। পরবর্তীতে সাকিলা তার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানায় তানজিলা আক্তার পারভীন এবং অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন যার মামলা নম্বর-১৯, তাং-১৪/১০/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০/ সংশোধনী (২০২০) এর ৭/৩০।

 

 

র‌্যাব-১০ এর সিনি. সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার জানায়, ১৪ অক্টোবর (সোমবার) আনুমানিক সকাল ৭টায় র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও র‌্যাব-০৮ এর সহায়তায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানার চরলক্ষী নারায়ন এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে চাঞ্জল্যকর ৮ মাসের শিশু সাইফানকে অপহরণকারী তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫)কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন শিশু ভিকটিম সাইফানকে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে ঘটনাস্থলে একটি বাসা হতে অক্ষত অবস্থায় শিশু ভিকটিম সাইফান মজুমদারকে উদ্ধার করা হয়।

তাপস কর্মকার আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, আসামী পারভীনের বাবা-মা নেই। প্রায় ১২ বছর পূর্বে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তির সাথে পারভীনের বিবাহ, হয় ঐ স্বামীর ঘরে আরেকজন স্ত্রী ছিল। সেখানে সতীনের একই সংসারে বেশ কিছুদিন থাকার পর পারভীনের বাচ্চা না হওয়ার কারনে উক্ত স্বামীর সাথে পারভীনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাসকারী প্রবাসী আশরাফুল আলমের সাথে পুনরায় পারভীনের বিবাহ হয়। আশরাফুলও বিবাহিত ছিল তার প্রথম স্ত্রী পাগল হয়ে নিরুদ্ধেশ ছিল এবং ঐ স্ত্রীর ঘরের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানও রয়েছে যার দেখাশোনা পারভীন করত। বিয়ের কয়েক মাস পর পারভীনের বাচ্চা না হওয়ার কারণে তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ লেগেই থাকত। অতঃপর আশরাফুল প্রবাসে চলে গেলে তার কিছুদিন পর পারভীন আশরাফুলকে জানায় যে, পারভীন অন্তঃসত্তা হয়েছে এ কথা শুনে আশরাফুল অনেক খুশি হয়। পরবর্তীতে তার বছর খানিক পর আশরাফুল দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিষয়টি তার স্ত্রী পারভীন কে জানায়। আশরাফুল দেশে এশে যদি জানতে পারে যে, পারভীন আশরাফুলকে অন্তঃসত্তা হওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলেছে তাহলে পুনরায় পারভীনের সংসার ভেঙ্গে যাবে, তাই পারভীন ০৮-১০ মাস বয়সের একটি শিশু অপহরণ করার মতো জঘন্য সিদ্ধন্ত গ্রহণ করে। পারভীন শিশু ভিকটিম সাইফানের মা সাকিলার ভাড়াটিয়া প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে পারভীন সাইফানের সম্পর্কে পূর্ব হতে সবকিছু জানতো তাই সে সাইফানকেই অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। অতঃপর পরিকল্পনা মোতাবেক সাকিলার বাসায় যায় এবং সাকিলাকে অসহায়ত্বের মিথ্যা কথা বলে সাকিলার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে তার বাসায় আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীতে সাইফানকে অপহরণ করে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা যায়।

আরোও পড়ুনঃ ভাগ্নেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, গ্রেফতার মামা