*) যে কোন সময় ঘটতে পারে বেইলি রোডের মতো বড় অগ্নি দুর্ঘটনা
*) বেশির ভাগ ভবনে নেই পানির ব্যবস্থা/ কোন অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা
*) একাধিক বার স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে তাগিদ দেয়া হলেও তেমন ব্যবস্থা গৃহীত হয় নি
*) অগ্নি নির্বাপন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারন হিসেবে ভবন মালিকদের সদিচ্ছাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা
*) ফায়ার সার্ভিস বলছে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারনা নিতে অনীহা স্থাণীয় সকলের
দেশের তৈরী পোশাকের সর্ববৃহৎ পাইকারী বাজার কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী রয়েছে ভয়ঙ্কর অগ্নি ঝুকিতে। ব্যবসায়ীদের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহনে অনীহা এবং ভবন মালিকদের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহনে অবহেলায় এই ঝুকি বেড়ে গেছে বহুগুনে। স্থানীয়রা বলছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী জুড়ে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বেইলি মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীতে ১০ হাজার সোরুম ও ৬ হাজার কারখানা রয়েছে। এই এলাকায় কয়েক লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতিনিয়ত অগ্নিকান্ডের ঝুকি মাথায় নিয়ে কাজ করছে। কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এখনকার ভবন মালিকেরা ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর ভবন তৈরী করেছে। আমাদের দেশে গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্টীতে বহু আগুন লাগার উদাহরন রয়েছে , অণেক মানুষ মৃত্যুর নজির রয়েছে। তার পরেও অগ্নিকান্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে এখানকার কোন ভবন মালিক ই ভবন নির্মান করে নি, মানে নি কোন নিয়ম নীতি। গার্মেন্টস পল্লীর অধিকাংশ ভবনে কারখানা থাকলেও কোন মালিক ই ভবন নির্মানে মানে নি কারখানা আইন। এছাড়া অধিকাংশ বিল্ডিং এর নেই রাজউকের কোন অনুমোদন।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীতে গিয়ে দেখা যায় কোন প্রকার ফাকা না রেখেই একটি ভবনের সাথে আরেকটি ভবন লাগোয়া ভাবে তৈরী করা হয়েছে। বেশির ভাগ ভবনের সিড়িই প্রশস্থ না। ভবন মালিকেরা রাস্তা না ছেড়ে ভবন নির্মান করায় গার্মেন্টস পল্লীর রাস্তাগুলো অনেক সরু ও চিপা। ফায়ার সার্ভিসের যাতায়েতের ব্যবস্থাও নেই এখানে তেমন। অধিকাংশ সোরুম বা কারখানায় নেই অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। যে সকল প্রতিষ্ঠানে আছে সেগুলার ও হয়তো মেয়াদ নেই কিংবা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা কেউ জানে না। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নেই কোথাও।
প্রতিনিয়ত এক প্রকার মৃত্যু ঝুকি নিয়েই কাজ করছে লাখ লাখ শ্রমিক। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার গুলো প্রায় বিল্ডিং এর সাথে লাগানো। ফলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়ে যায়। অধিকাংশ ভবনে নেই জরুরী নির্গমন পথ। কিছু কিছু স্থানে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
স্থানীয় অনেকেই জানান, প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে গড়ে উঠা কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী গত এক যুগে অনেক বড় ও বৃস্তৃত হয়েছে। উচু উচু ভবন নির্মান করা হলেও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব দেয় নি এখানকার কোন ভবন মালিক। স্থানীয় সাংসদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের বার বার তাগিদ দেয়ায় ফলে কেউ কেউ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার দিকে গুরুত্ব আরপ করলেও অধিকাংশ ভবন ও সোরুম মালিকেরা এখোনো অগ্নি নির্বাপক কোন নিয়ম মানছেন না। তবে এ জন্য ব্যবসায়ীদের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহনে অনীহা এবং ভবন মালিকদের অবহেলাকেই দায়ী করছেন সকলে।
আগানগরের নামাপারা এলাকার মোযাম্মেল নামে এক বাসিন্দা জানান, ১ যুগ আগেও এখানে এত জনবহুল মার্কেট ছিলো না। এখানে শিল্পায়ন দ্রুত হয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা শুধু তাদের নিজেরটাই বুঝেছেন,শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বা সুযোগ সুবিধার কথা তারা কখনোই চিন্তা করে না। দেশে কোথাও আগুন লাগলে তখন একটু এলাকার হর্তাকর্তাদের তোরজোর দেখা যায়, পরে আবার যেটার সেটাই হয়।
জিলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় জামাল নামে এক দোকানদার বলেন, আমাদের দোকানদারদের সচেতনতার অভাব রয়েছে এছাড়া মালিক সমিতির জোড়াল ভূমিকা দরকার। গত বছর বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পরে সবাই একটু নরেচরে বসেছিলো। পরে আর কোন খবর নাই।
স্থানীয় একজন তরুন ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ বলেন, গার্মেন্টস ও দোকান মালিক সমিতির উচিত ব্যবসায়ী ও গার্মেন্টস পল্লীর স্বার্থে অগ্নি ঝুকির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা, অগ্নি ঝুকি এরাতে আরো দায়িত্ববান হওয়া। ফায়ের সার্ভিসের লোকজনদের ডেকে, অগ্নি নির্বাপক মহড়ার ব্যবস্থা করা উচিত, প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে অগ্নি নির্বপক ব্যবস্থার জন্য বিশেষ ভাবে জোড় দেয়া উচিত তাদের। এছাড়া প্রতিটি ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুতের লুজ কানেকসন সমস্যার ও সমাধান করা উচিত।
গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস পল্লীর আলম মল, নূর মার্কেটে, তানাকা সুপার মার্কেট, হেলাল টাওয়ার, গ্রীন টাওয়ার সহ একাধিক ভবনে ছোট ছোট একাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে নুরু মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শতাধিক দোকান মুহুর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারপরেও টনক নড়েনি এখানকার ব্যবসায়ী , ভবন মালিকদের।
দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ম.ই মামুন বলেন, গার্মেন্টস পল্লীর ব্যবসায়ীদের আরো সচেতন করতে হবে। আগে এগিয়ে আসতে হবে জমিদারদের। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস মালিক সমিতিকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের আরো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। গার্মেন্টস মার্কেট ও গার্মেন্টস পল্লীকে ঢেলে সাজাতে হবে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ দোকান মালিক ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মুসলিম ঢালী বলেন, গার্মেন্টস পল্লীতে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্তা রয়েছে। আমাদের কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীতে আগে বড় ধরনের কোন অগ্নিকান্ড ঘটে নি, তাই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় আগে তেমন জোড় ও দেয়া হয় নি। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ও তদারকি এখানে ছিলো না এক সময়। আমরা আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীদের সচেতন করে তুলছি।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: কাজলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী এড়িয়াটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানির কোন ব্যবস্থা নেই কোন ভবনে। আল্লাহ না করুক,একবার অগ্নিকান্ড ঘটলে মানুষ কিভাবে বের হবে তার কোন ব্যবস্থা নাই। এখানে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা চাই সবাইকে সচেতন করতে , অগ্নি নির্বাপক প্রাথমিক ট্রেনিং দিতে, কিন্তু কেও আগ্রহ দেখায় না। এখানে কোন ভবনের ই ফায়ার লাইসেন্স নাই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবু রিয়াদ জানান,এটি খুবি ঘনবসতি পূর্ন এবং ঝুকিপূর্ন একটি জায়গা। আগুন লাগলে তারা কিভাবে বের হবে কারখানাগুলোতে সেই ব্যবস্থা নেই। আমরা ফায়ার সার্ভিস, মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট নেত্রীবৃন্দের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীতে সর্বোচ্চ অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।#