ইরানের সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান ও অন্যান্য সহযাত্রীদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে। তারা মাতম করে শোক প্রকাশ করছেন। রাইসির জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছেন।
পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ নিহত অন্যদের প্রথম জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ভোর থেকেই নির্ধারিত স্থানে মানুষ জড়ো হতে থাকেন। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। তাদের বেশিরভাগের পরনে ছিল কালো পোশাক। অনেকের হাতে ছিল রাইসির ছবি ও ইরানের পতাকা।
আল জাজিরা জানায়, তাবরিজের জানাজা শেষে আরও কয়েকটি স্থানে জানাজার আয়োজনের কথা রয়েছে। পরে রাইসি, আব্দুল্লাহিয়ানের মরদেহ তেহরানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আরও একটি জানাজা হবে। রাইসির দাফনসংক্রান্ত সব কার্যক্রমই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পাদন করা হচ্ছে।
এদিকে মাশহাদ শহরে রাইসির দাফনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আয়োজকরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে সেখানে তাদের প্রেসিডেন্টকে ‘গৌরবময় দাফন’ উপহার দেওয়া হবে।
রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। পরে সোমবার দুর্ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়।
এ দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতিসহ সব আরোহী নিহত হন।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৯ মে) আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে দুটি বাঁধ উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। এরপর হেলিকপ্টারে চড়ে ইরানের উত্তর-পশ্চিমের তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তাবরিজ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
পরদিন সোমবার রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলে। দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারটি বেল ২১২ মডেলের বলে জানানো হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে। ১৯৬০ সালে একটি মার্কিন কোম্পানি দুই ব্লেডের এই মডেলটি তৈরি করেছিল কানাডিয়ান সেনাবাহিনীর জন্য।
রাইসি ছাড়াও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি, পূর্ব আজারবাইজানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান মেহেদি মুসাভি ছিলেন হেলিকপ্টারটিতে। এ ছাড়া হেলিকপ্টারের পাইলট, কো-পাইলট ও ক্রুও মারা গেছেন।
একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।
তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে মনে করা হয়েছিল একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন ইব্রাহিম রাইসি।