ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক ব্যবসায়ী পরিবারের পৈত্রিক জমি দখল করতে না পেরে সাবেক এক সংসদের মদদে আওয়ামী হকার্স লীগ ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৬ আগষ্ট) দুপুরে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের দেওশুর এলাকায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন সোহেল ও নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন সোহেল বলেন, পাঁচ দশক আগে আমার বাবা সাহেদ আলী ওরফে শাহু বেপারী আমার চার বোন, দুই ভাই ও মায়ের নামে ভিন্ন ভিন্ন রেজিষ্ট্রি করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ব্রাক্ষনকিত্তা মৌজায় ৬৬৯ শতাংশ জমি কেনেন। পরবর্তীতে ওই জমির নিরাপত্তায় চারদিকে পাকা সীমানা দেয়াল নির্মাণ করি। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকা-২ আসনের সাবেক সাংসদ কামরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে আওয়ামী হকার্স লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কালিন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, মো. শাহাবুদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের ভাই মো. সুমন, মো. সুজন ও মো. রাসেল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তারা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা আমাদের জমিতে জোরপূর্বক “সোনার বাংলা গ্রিন সিটি” নামক অবৈধ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন। এসময় আমরা বাঁধা দিতে গেলে আমাদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের হত্যা ও গুমের হুমকি দেওয়া হয়। ভূমিদস্যুদের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা গত ১ এপ্রিল ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করি। বিষয়টি জানতে পেরে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে আনোয়ার হোসেন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও প্রাণ নাশের হুমকি দুমকি দেন। পরবর্তীতে আমরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৫ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
সালাউদ্দিন সোহেল আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাইনি। এরপরও সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও দোসর ইউসুফ আলী, আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, আনোয়ার হোসেন ও তার ভাইয়েরা আমাদের জমিতে বালু ভরাট করে। একইভাবে আনোয়ার চক্র আমাদের আশপাশে থাকা আরও শত শত বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে ভরাট করেছে। এরপর সেখানে তারা অবৈধভাবে প্লট তৈরি করে ”ইউরো বাংলা গ্রিন সিটি” নামক আবাসন ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জমি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। তারা আমাদের জমির উপর দিয়ে বেআইনিভাবে সড়ক নির্মাণ করেছে। তাদের এই অন্যায় কর্মকাণ্ডের কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উল্টো তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হতো। সাধারণ মানুষ যাতে আবাসন প্রকল্পের নামে জমি কিনে প্রতারণার স্বীকার না হয় সেজন্যে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জনসাধারণকে অবহিত করছি। সরকার পতনের পর আনোয়ার ও তার তিন ভাই গা ঢাকা দিয়েছে। এখন দেশে নিরপেক্ষ সরকার রয়েছে। তাই আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আশা করছি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আমাদের বৈধ জমি উদ্ধারে আমাদের সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়া যেসব আওয়ামী লীগ নেতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে অন্যথায় আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কলা করা হলেও তার মুঠোফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আনোয়ারসহ তার তিন ভাই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন। ৫ জুলাইয়ের পর থেকে তাদের কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি।